আমাদের দেশে সচেতন মানুষের মধ্যে দেশি মুরগির চাহিদা সব সময়ই বেশি। এর মাংসের স্বাদ, ডিমের গুণগত মান ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শহর থেকে গ্রাম – সর্বত্র জনপ্রিয়। কিন্তু বাজারে এখন অনেক ধরনের ফার্ম ও হাইব্রিড জাতের মুরগি আসছে, যেগুলোকে অনেক সময় দেশি মুরগি বলে চালানো হয়। তাই সঠিকভাবে আসল দেশি মুরগি চিনে নেওয়া খুব জরুরি। আজকের এই লেখায় আমরা জানার চেষ্ঠা করবো, কীভাবে সহজে আসল দেশি মুরগি চেনা যায়।
১. দেশি মুরগির আকার-আকৃতি দেখে চেনা
আসল দেশি মুরগির গড়ন তুলনামূলকভাবে ছোট ও হালকা হয়। ফার্মের বা হাইব্রিড মুরগি আকারে মোটা ও ভারী দেখায়।
দেশি মুরগির:
- শরীর হালকা পাতলা
- হাড় সরু এবং শক্ত
- গলা ও পা লম্বা হয়
২. দেশি মুরগির পালকের রঙ ও গঠন
আসল দেশি মুরগির পালক দেখতে উজ্জ্বল নয় বরং কিছুটা ম্লান এবং স্বাভাবিক হয়। এর পালক ঘন না হলেও সুগঠিত।
- পালকে অস্বাভাবিক চকচকে ভাব থাকে না
- প্রাকৃতিক রঙ (বাদামী, ধূসর, সাদাটে) থাকে
- পালক টানলে সহজে উঠে না
৩. দেশি মুরগির হাঁটার ধরন ও আচরণ
দেশি মুরগি চলাফেরা করে খুব চটপটে ও চঞ্চলভাবে। সব সময় মাটি খোঁচাখুঁচি করে, দানাদানা খুঁজে খায়।
- ফার্ম মুরগি বেশি স্থির থাকে
- দেশি মুরগি খাবারের জন্য সারাক্ষণ ঘোরাফেরা করে
- দ্রুত দৌড়াতে পারে
৪. দেশি মুরগির ডিমের গুণমান ও আকৃতি
দেশি মুরগির ডিম সাধারণত ছোট আকারের হয়, কিন্তু এর খোলস শক্ত এবং রঙ হালকা বাদামী হয়। ডিম ফাটালে কুসুম গাঢ় হলুদ হয়ে থাকে।
- ডিম ছোট কিন্তু ভারী
- কুসুম ঘন ও পুষ্টিকর
- খেতে সুস্বাদু
৫. দেশি মুরগির বংশগত বৈশিষ্ট্য
আসল দেশি মুরগির প্রজনন ধীরে হয়। বছরে তুলনামূলক কম ডিম দেয় (৮০-১২০টি)। কিন্তু ফার্ম জাত প্রতি বছরে ২০০-৩০০টি ডিম দিতে পারে।
- ডিম দেওয়ার হার কম
- প্রজনন সময় দীর্ঘ
- বংশ বিস্তার ধীরগতির হয়
৬. দেশি মুরগির বাচ্চার বৃদ্ধি ধীরগতির
দেশি মুরগির বাচ্চারা ধীরে ধীরে বড় হয়। একে নিয়মিত প্রাকৃতিক খাবার খেতে হয়। এতে প্রায় ৬-৮ মাসে পূর্ণাঙ্গ মুরগি হয়।
- বাচ্চারা প্রথম দিকে দুর্বল দেখায়
- ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়
- অল্প খেয়ে বাঁচে
৭. দেশি মুরগির জন্য অ্যান্টিবায়োটিক বা ওষুধের ব্যবহার নেই
দেশি মুরগির যত্নে সাধারণত কোনো কেমিক্যাল বা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় না। এরা প্রাকৃতিকভাবেই রোগ প্রতিরোধ করতে পারে।
- কম রোগে পড়ে
- ভ্যাকসিন ছাড়াও টিকে থাকে
- প্রাকৃতিক খাবারে অভ্যস্ত
৮. দেশি মুরগির খাওয়ার ধরন
দেশি মুরগি ঘাস, কেঁচো, পোকামাকড় এবং ধানের খুদ খেয়ে বাঁচে। অন্যদিকে, ফার্ম মুরগিকে প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ানো হয়।
- নিজে খাবার খোঁজে
- দানাদার খাবারে অভ্যস্ত
- কৃত্রিম খাবার ছাড়া চলে
৯. দেশি মুরগির দামের পার্থক্য
আসল দেশি মুরগির দাম ফার্ম মুরগির তুলনায় অনেক বেশি হয়। অনেক সময় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ফার্ম মুরগিকে দেশি বলে বিক্রি করে।
- দেশি মুরগির কেজি দাম অনেক বেশি
- কাস্টমারদের বিভ্রান্ত করতে ফার্ম জাতকে দেশি বলে চালানো হয়
- সঠিক উৎস থেকে কিনলে প্রতারণা কম হয়
১০. দেশি মুরগির মাংসের স্বাদ ও রং
দেশি মুরগির মাংস চিবোতে কষ্ট হয় কারণ তা শক্ত। মাংসের রং কিছুটা গাঢ় ও রক্তিম হয় এবং রান্নার পরও সুগন্ধ থাকে।
- মাংস বেশি সময় ধরে রান্না করতে হয়
- খেতে সুস্বাদু ও ঘ্রাণযুক্ত
- ফার্ম মুরগির তুলনায় অনেক শক্ত ও ঘন
আসল দেশি মুরগি চিনে নেওয়া এখন সময়ের দাবি, বিশেষ করে যারা স্বাস্থ্য সচেতন এবং প্রাকৃতিক খাবার খেতে চান তাদের জন্য। এই লেখায় আমরা যে ১০টি লক্ষণের কথা বলেছি, সেগুলো অনুসরণ করলে সহজেই আপনি ফার্ম জাত মুরগি থেকে দেশি মুরগি আলাদা করতে পারবেন। সঠিক জ্ঞান থাকলে আপনি প্রতারিত হবেন না এবং পরিবারের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার বাছাই করতে পারবেন।